যদি আপনার ইউটিউব চ্যানেল থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাকে কিছু এক্সট্রা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, চ্যানেলকে হ্যাকিং বা অনিরাপদ আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য ।
এরকম অনেক চ্যানেল খুঁজে পাবেন যারা মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার নিয়ে হ্যাকিং এর শিকার হয়েছে ।
সাধারণত যেসব চ্যানেলে বেশি সাবস্ক্রাইবার থাকে, বেশি ভিজিটর থাকে, মানসম্মত ভিডিও থাকে এই ধরনের চ্যানেল গুলো বেশি হ্যাকিং এর শিকার হয় । হ্যাকিং এর শিকার হলে আপনার বিভিন্ন ভিডিও ডিলিট হয়ে যেতে পারে, অনিরাপদ কনটেন্ট গুলো আপনার চ্যানেলে আপলোড হতে পারে অথবা সম্পূর্ণ চ্যানেলটিই হ্যাকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে ।
নিম্নলিখিত নিরাপত্তা সংক্রান্ত গাইডলাইন যদি আপনি মেনে চলেন আপনি শতভাগ নিশ্চিত থাকুন আপনার ইউটিউব চ্যানেল কখনো হ্যাকিং এর শিকার হবে না ।
কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন ?
যেকোনো ইউটিউব চ্যানেল শতভাগ নিরাপদ করতে হলে আপনাকে কয়েকটি স্তরের নিরাপত্তা যোগ করতে হবে । নিম্নলিখিত প্রতিটি নিরাপত্তা স্তর আপনার ইউটিউব চ্যানেলে নিশ্চিত করুন ।
ধাপ #১ সিকিউর জিমেইল একাউন্ট ব্যবহার করুন
ধাপ #২ একটি লগ ইন ডিভাইস এবং আপডেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করুন
ধাপ #৩ “remember my password” এই অপশনটি ডিজেবল করে দিন
ধাপ #৪ প্রতি মাসে একবার করে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন
ধাপ #৫ ইউটিউব চ্যানেলে two step verification ব্যবহার করুন
ধাপ #৬ কম্পিউটারে প্রিমিয়াম এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন
ধাপ #৭ পাবলিক ওয়াই ফাই ব্যবহার করা বন্ধ করুন
ধাপ #১ সিকিউর জিমেইল একাউন্ট ব্যবহার করুন
বেশিরভাগ ইউটিউব চ্যানেলগুলো হ্যাক হয় দুর্বল জিমেইল একাউন্ট ব্যবহারের কারণে এবং সঠিকভাবে জিমেইল একাউন্ট তৈরি করতে না পারার কারণে ।
যে কোন জিমেইল একাউন্ট ১০০% নিরাপদ করার জন্য অবশ্যই কিছু স্ট্রাটেজি ফোলো করতে হবে, যে টেকনিক গুলো মেনে কোন জিমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরি করলে কোন হ্যাকার আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে পারবে না ।
- জিমেইল একাউন্টের নাম অবশ্যই পরিচিত কোন নাম দিবেন না, আলফাবেট, সংখ্যা এবং বিশেষ ক্যারেক্টারের মিশ্রণে জিমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন । যেমন aderg.fegefccs5193.erc2585dhtvsfvbfv@gmail.com
- জিমেইলে লগইন করার জন্য two step verification পদ্ধতি ব্যবহার করুন
- রিকভারি জিমেইল হিসেবে অন্য আরেকটি সুরক্ষিত জিমেইল ব্যবহার করুন
- নিজস্ব ভেরিফিকেশন ফোন নাম্বার ব্যবহার করুন
- সকল সিকিউরিটি এলার্ট নোটিফিকেশন অন রাখুন
- একটি জিমেইল একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ব্যবহার করুন, নতুন চ্যানেলের জন্য নতুন জিমেইল তৈরি করুন
ধাপ #২ একটি লগ ইন ডিভাইস এবং আপডেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করুন
আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ড্যাশবোর্ডে লগইন করার জন্য শুধুমাত্র একটি ডিভাইস ব্যবহার করুন এবং সেই ডিভাইসের সবগুলো সফটওয়্যার আপডেটেড রাখবেন, আন-অথরাইজড কোন সফটওয়্যার ইন্সটল করবেন না ।
নিরাপদ লিংকগুলোতে ক্লিক করবেন না, লেটেস্ট উইন্ডোজ ভার্সন ব্যবহার করবেন এবং এই ডিভাইসটি অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দিবেন না ।
অবশ্যই মনে রাখবেন, কোন ইউটিউব চ্যানেল হ্যাকিং থেকে রক্ষা করার জন্য লগ ইন ডিভাইসের গুরুত্ব অনেক বেশি ।
আপনার ব্যবহৃত কম্পিউটারটিই যদি অনিরাপদ হয়ে থাকে তাহলে কোন সিকিউরিটি পদ্ধতিই আপনার কাজে লাগবে না ।
এজন্যই সবার আগে চেষ্টা করুন নিজের কম্পিউটারটি নিরাপদ করার, সম্ভব হলে নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে এই কম্পিউটারটি ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকুন ।
ধাপ #৩ “remember my password” এই অপশনটি ডিজেবল করে দিন
গুগল ক্রমে remember my password এরকম একটি ফিচার আছে, যার মাধ্যমে যে কোন পাসওয়ার্ড আপনি গুগল ক্রমে সেভ করে রাখতে পারবেন যাতে পরবর্তীতে লগইন করার সময় ওই পাসওয়ার্ডটি পুনরায় টাইপ করে না লাগে ।
এই সিস্টেমের প্রধান সুবিধা হল পাসওয়ার্ডটি বারবার টাইপ না করা আর প্রধান অসুবিধা হলো কখনো কেউ আপনার ডিভাইস টি হাতে পেয়ে যায় তাহলে তারা আপনার ডিভাইসে সেভকৃত এই পাসওয়ার্ড গুলো দেখতে পারবে ।
তাহলে বুঝতেই পারছেন এটি কত বড় একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ । সামান্য সুবিধার জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করা আপনার উচিত হবে না ।
খুব গুরুত্বপূর্ণ পাসওয়ার্ড গুলো অবশ্যই গুগল ক্রমে সেভ করে রাখবেন না । সেই সাথে তৃতীয় পক্ষের কোন পাসওয়ার্ড সেভ করার অ্যাপস বা এক্সটেনশন ব্যবহার করবেন না ।
ধাপ #৪ প্রতি মাসে একবার করে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন
আপনার জিমেইলের পাসওয়ার্ড প্রতি মাসে একবার করে অবশ্যই পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন । যদি শতভাগ নিশ্চিতও থাকেন আপনার পাসওয়ার্ডটি কেউ জানে না কিংবা কোন হ্যাকিং হয়নি তারপরও আপনি চেষ্টা করুন আপনার পাসওয়ার্ডটি প্রতি মাসে অন্তত একবার পরিবর্তন করার ।
কারণ যারা প্রফেশনাল হ্যাকার আছে তারা অনলাইনে ফাঁদ পেতে বসে আছে, কোনভাবে যদি আপনার পাসওয়ার্ডের প্যাটার্ন অনুমান করতে পারে তাহলে তারা আপনার সারা জীবনের কষ্টে অর্জিত চ্যানেলটি হ্যাক করে ফেলতে পারে ।
মনে রাখুন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করাই জ্ঞানীর লক্ষণ ।
এজন্যই নিজের ইউটিউব চ্যানেলের পাসওয়ার্ড নিয়মিত পরিবর্তন করুন সিকিউরিটি স্তরকে আর ও এক ধাপ বাড়িয়ে দিন ।
ধাপ #৫ ইউটিউব চ্যানেলে two step verification ব্যবহার করুন
ইউটিউব চ্যানেলে অ্যাডভান্স লেভেলের সিকিউরিটির নিশ্চয়তা দেয় two step verification, বিভিন্ন আন-অথরাইজড লগইন থেকেও আপনার চ্যানেলকে রক্ষা করবে ।
প্রতিবার লগইন করার সময় আপনার ব্যবহৃত নিজস্ব মোবাইল নাম্বারে একটি কোড পাঠানো হবে সেই কোড টি সঠিকভাবে টাইপ করতে পারলেই আপনি লগইন করতে পারবেন । আপনাকে শতভাগ রিকমেন্ড করছে two step verification সিকিউরিটি সিস্টেমটি ব্যবহার করার জন্য ।
ধাপ #৬ কম্পিউটারে প্রিমিয়াম এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন
আপনার যদি শুধুমাত্র একটি কম্পিউটার হয়ে থাকে এবং সেই কম্পিউটারেই দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সকল কাজ ছাড়াও আপনার youtube channel এবং ওয়েবসাইটের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি থাকে ।
তাহলে আপনি লেটেস্ট এন্টিভাইরাস প্রিমিয়াম সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করতে পারেন ।
এই ধরনের প্রিমিয়াম সফটওয়্যার গুলো কম্পিউটারের বিভিন্ন ম্যালওয়ার ভাইরাস, অনিরাপদ ফাইল, অনিরাপদ ওয়েবসাইট এবং সর্বোপরি বিভিন্ন হ্যাকার থেকে সম্পূর্ণ কম্পিউটার কে রক্ষা করে ।
এই কারণে যে কেউ চাইলেই আপনার কম্পিউটার হ্যাক করতে পারবে না, গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো চুরি করতে পারবে না ।
সফটওয়্যার গুলো অবশ্যই প্রিমিয়াম এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার হতে হবে, ফ্রি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার গুলোর খুব বেশি কার্যকরিতা নেই, নিজের তথ্যগুলোকে ভালোভাবে নিরাপদ করতে অবশ্যই কিছু টাকা পয়সা খরচ করতেই হবে ।
ধাপ #৭ পাবলিক ওয়াই ফাই ব্যবহার করা বন্ধ করুন
হ্যাকিং এর জগতে পাবলিক ওয়াইফাই এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীর সকল তথ্য হাতিয়ে নেওয়া খুবই জনপ্রিয় ক্ষতিকর একটি পদ্ধতি ।
পাবলিক ওয়াইফাই এবং ব্যবহারকারীর মধ্যে ফাঁদ পেতে রাখে হ্যাকাররা ।
ইনক্রিপশন ফাইল, জাভা স্ক্রিপ্ট ফাইল এবং বিভিন্ন ক্ষতিকর ম্যালওয়ার গুলো খুব সহজেই পাবলিক ওয়াইফাই এর মাধ্যমে ব্যবহারকারী ডিভাইসে পুশ করে দিতে পারে ।
এজন্যই যেখানে সেখানে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করা বা ফ্রি হটস্পট ওয়াইফাই ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকুন । এজন্য বিভিন্ন সময় দেখবেন ফ্রী হটস্পট ওয়াইফাই গুলো মানুষজন নির্ভয়ে চালাতে থাকে কিন্তু তারা বোঝেনা এটি হ্যাকারদের পাতা একটি ফাঁদ ।
এজন্য নিজের সতর্কতা নিজের কাছে রাখুন, ফ্রি জিনিস ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন ।
কয়েকদিন আগেও বাংলাদেশের সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেল হ্যাকিং হয়েছিল, যেখানে প্রায় ১০ মিলিয়ন এর বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে, এবং বিভিন্ন সিকিউরিটি স্তর নিশ্চিত করা আছে । যদিও পুনরায় তাদের YouTube Channel টি ফিরিয়ে এনেছে, সেই সাথে আরো কয়েক স্তরে নিরাপত্তা যোগ করেছে যাতে পরবর্তীতে কেউ আবার হ্যাকিং না করতে পারে ।
একইভাবে আপনিও যদি মনে করেন আপনার ইউটিউব চ্যানেল টি হ্যাক হয়েছে তাহলে চ্যানেলটি রিকভার করার জন্য গুগলের এই পদ্ধতি গুলো জানুন ।
আরো পড়ুনঃ ইউটিউব ভিডিও ইম্বেড করার উপায়