WigMarketing

কেনো ফ্রিল্যান্সিং করবেন না?

why freelancing is bad ib Bangla

ফ্রিল্যান্সারদের অনলাইন মার্কেটিং সম্পর্কে খুব ভালো জ্ঞান থাকে এজন্য তারা খুব ভালোভাবেই জানে যে কিভাবে নতুনদেরকে ফ্রিল্যান্সিংয়ে নিয়ে আসা যায় এবং বিভিন্ন ট্রেনিং কোর্স ও অন্যান্য কোর্স বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা যায়।

আপনি একটু খেয়াল করে দেখবেন যে বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সাররাই শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সিং এর ভালো দিকটা বলে থাকে এবং মার্কেটিং করে তাদের উপার্জনের কথা বলে।

এক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন রকমের আই-ইনকামের স্ক্রিনশটও দেখিয়ে থাকে। তাদের বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস এর অর্থ উপার্জনের স্ক্রিনশট এবং কথাবার্তার স্টাইল দেখে আপনিও ভাবতে থাকেন যে ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য পারফেক্ট।

আমি আবার বলছি – শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্য ফ্রিল্যান্সিং করতে আসবেন না।

ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে কম্পিটিশন অনেক বেশি হয়ে থাকে, এটা দেশীয় গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না, ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস যেমন সারা বিশ্বব্যাপী তেমনি ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যাও সারা বিশ্বব্যাপী। এইজন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড ফলো করে তাই দেশীয় ফ্রিল্যান্সারদের সাথে নিজেকে কম্পেয়ার করে কোন লাভ নেই।

আরো পড়ুনঃ কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন?

ফ্রিল্যান্সিং কে যদি পার্ট টাইম পেশা হিসেবে নেন তাহলে খুব বেশি চিন্তার কারণ নেই তবে যদি এটাকে ফুল টাইম পেশা হিসেবে নিতে চান তাহলে অবশ্যই সমস্যা এবং সম্ভাবনা দুইটাই ভালোভাবে জেনে তারপরে কাজ শুরু করুন।

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে কয়েকটি বিষয় আপনি ভেবে দেখতে পারেনঃ

  • এই কাজটি শেখার প্রতি আপনার ইচ্ছা শক্তি আছে কিনা,কাজটি আপনার ভালো লাগে কিনা।
  • নিজের যোগ্যতা একবার পরিমাপ করুন ভেবে দেখুন এই কাজটি করার সর্বনিম্ন যোগ্যতা আপনার আছে কিনা।
  • আপনার কাছে যথেষ্ট সময় আছে কিনা
  • পরিশ্রম! পরিশ্রম! এবং ধারাবাহিকভাবে পরিশ্রম করার ধৈর্য আছে কিনা

আপাতত উপরের পয়েন্টগুলোই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য যথেষ্ট, আপনি চাইলে পারেই বাস্তবতার সাথে বিষয়গুলো মিলিয়ে নিতে পারেন।

তবে মনে রাখবেন ফ্রিল্যান্সার কোন সহজ বিষয় না কারো লোভে পড়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন না, নিজের বিচার বুদ্ধি দিয়ে যাচাই-বাছাই করে তারপর সিদ্ধান্ত নিবেন, আপনি এটা পাওয়ার যোগ্য কিনা? প্রশ্নটা নিজের বিবেকের কাছে করুন।

ঘুমের ঘরে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করার স্বপ্ন দেখে লাভ নাই বাস্তবতার সাথে স্বপ্নটা মিলিয়ে দেখুন যে স্বপ্নটা বাস্তবে পরিণত করার যোগ্যতা আপনি রাখেন কিনা। তাই অবশ্যই জেনে নিবেন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করলে আসলেই কোন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি আপনাকে হতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিং করলে যে ধরনের সমস্যায় পরবেন

  • ফ্রিল্যান্সিংয়ে পরিশ্রমের মাত্রা অনেক বেশি থাকে , এখানে যে ব্যক্তি যতটা বেশি পরিশ্রম করতে পারে তার সফল হবার সম্ভাবনা তত বেশি থাকে। ফ্রিল্যান্সিং কে স্বাধীন পেশা বলা হলেও আসলে এটা স্বাধীন না, এখানেও অনেক বাধা ধরা নিয়ম আছে যেটাকে অবশ্যই আপনাকে মেনে চলতে হবে। আপনি চাইলে পারেই ইচ্ছা-স্বাধীন মত কাজ ফেলে রেখে ঘুরে বেড়াতে পারবেন না। নিজের সময়-সুযোগ টাকে যে যতটা বেশি কাজে লাগাবে সে ততটা বেশি এগিয়ে থাকবে। তাই আচমকা এখানে এসে পরিশ্রমের মাত্রা দেখে ভয় পেয়ে যেতে পারেন, এজন্য নিজেকে অবশ্যই প্রস্তুত রাখুন যে এখানে এসে এই ধরনের পরিশ্রম আপনাকে করতে হবে।
  • ফ্রিল্যান্সিং হলো দক্ষতার জায়গা, যোগ্যতা প্রমাণের জায়গা। আপনার কাছে দক্ষতা নেই যোগ্যতা নেই আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর সফল কখনোই হবেন না, হয় আপনাকে যোগ্যতা নিয়ে আসতে হবে অথবা পরিশ্রম করে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে নইলে আপনি ব্যর্থ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে পরিচিত হবেন। কেউ  আপনাকে এমনি এমনি টাকা দিবে না! যদি না আপনার কাছে দক্ষতা থাকে! এইজন্য এখানে যদি আপনি দক্ষতা অর্জন করতে পারেন তাহলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করুন- নইলে পস্তাতে হবে।
  • অর্থই সবকিছু না, যত টাকাই ইনকাম করুন না কেন! আপনি ধরেই রাখুন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করলে পারিবারিক ও সামাজিক স্বীকৃতি পাবেন না। সমাজে অন্য দশ জন চাকরিজীবীর মতো সম্মান হয়তো আপনাকে দেবে না তবে এখানে যদি নিজস্ব বিজনেস প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, অনলাইন মার্কেটপ্লেসে নিজস্ব ভাবমূর্তি তৈরি করতে পারেন তাহলে আপনি অনেক দূরে এগিয়ে যাবেন।
  • সঠিক গাইডলাইনের অভাবে এই সেক্টরে আপনি বেশি দূর এগোতে পারবেন না কারণ আমাদের দেশে দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সারদের ইন্সট্রাকশন ছাড়া সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া আপনার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে। আপনি ভাবতে পারেন ইউটিউবের ফ্রি ভিডিও অথবা প্রিমিয়াম কোর্স দেখে আপনি ফ্রিল্যান্সিং শিখে যাবেন এটা একদমই ভুল ধারণা, ফ্রিল্যান্সিং এর আসল খেলা “এডভান্স লেভেল লার্নিং” বাংলাদেশে খুব কম মানুষই আছে যারা এডভান্স লেভেল স্ট্রাটেজি গুলো জানে এবং শিখিয়ে থাকে। এজন্য ফ্রিল্যান্সিং শুরু করলে আপনি এডভান্স লেভেল স্ট্রাটেজি শেখার জন্য অনেক বেশি সমস্যায় পড়বেন, আপনি হয়তো সমাধান নাও পেতে পারেন।
  • বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন কাজ করার পর জটিল স্বাস্থ্যগত কিছু সমস্যা দেখা দেয় যেমন দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে থাকার কারণে হৃদরোগ, ডাইবেটিকস, পিঠে ব্যথা, চোখে সমস্যা, স্থূলতা ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়াও বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সারই  একাকীত্ব বোধ করে যার ফলে হতাশা ও মানসিক অবসাদ তাদের উপর চেপে বসে।
  • বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের অনেক বড় একটি সমস্যা সেটি হল ইন্টারন্যাশনাল মানি ট্রানজেকশন, অর্থাৎ বাইরের দেশের সঙ্গে টাকা পয়সা লেনদেন করা। বাংলাদেশে একমাত্র বৈধ ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন গেটওয়ে হলো পেওনিয়ার। পেওনিয়ারের মাধ্যমে বাইরের দেশ থেকে টাকা নিয়ে আসতে পারবেন কিন্তু টাকা পাঠাতে হলে মিনিমাম ১০০০ ডলারের ট্রানজেকশন আপনার আগে থাকতে হবে, এছাড়াও সব ফ্রিল্যান্সাররা আবার পেওনিয়ার ব্যবহার করে না, তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে পেওনিয়ারে ডলার ইনপুট করারও কোন উপায় নাই। ফ্রিল্যান্সিং শুরু করলে করলে এরকম আন্তর্জাতিক ভাবে টাকা পয়সা লেনদেন করা, ডলার কেনাবেচা করা, অবৈধ পেমেন্ট গেটওয়ের সাহায্য নেওয়া ছাড়াও বিভিন্ন রকম সমস্যায় পড়বেন।
  • ফ্রিল্যান্সিংয়ের সব থেকে বড় আরেকটি সমস্যা হল ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করা। ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করা অনেক বেশি কষ্টকর, মার্কেটপ্লেসের সবাই দৌড়াই ভালো ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করতে বড় অর্ডার খুঁজে বের করতে, লাখ লাখ দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের ভিড়ে বেশিরভাগ সময়ই আপনি ব্যর্থ হবেন ভালো ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করতে অথবা বড় কোন অর্ডার পেতে। এমনও সময় আসবে যে আপনার সঠিক দক্ষতা এবং যোগ্যতা থাকার পরও আপনি ক্লাইন্টকে সন্তুষ্ট করতে পারছেন না। এইজন্য ফ্রিল্যান্সিং এ শুধুমাত্র নিজের কাজের প্রতি দক্ষ হলেই হয় না এইরকম অনেক বিষয় থাকে সেখানেও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে তারপরে মার্কেটপ্লেসের টিকে থাকতে হয়।

এতসব সমস্যার বাইরেও সবার কাছেই ফ্রিল্যান্সিং অনেক জনপ্রিয় একটি পেশা। নিজের আন্তরিকতা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে উপরের সবগুলো সমস্যাই সমাধান করা সম্ভব। তারপরও যারা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন অবশ্যই তারা এই সমস্যাগুলো মাথায় রাখবেন,সমস্যা মানেই দূরে সরে যাওয়া না। নিজেকে তৈরি করুন, সেই সময়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখুন ইনশাআল্লাহ অবশ্যই আপনি সফল হবেন।

আরো পড়ুনঃ- ওয়েবসাইট স্পিড অপ্টিমাইজেসশন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *