ওয়েবসাইট স্পিড অপটিমাইজ করার জন্য আমরা পাঁচটি চ্যাপ্টার তৈরি করেছি এখান থেকে বিগেইনার টু এডভান্স লেভেল পর্যন্ত পরিপূর্ণ একটি গাইডলাইন পেয়ে যাবেন।
ওয়েবসাইট পেজ স্পিড কি | website page speed in Bangla
ওয়েবসাইট পেজ স্পীড হলো পেজ লোডিং টাইম। একটি ওয়েবসাইট পেজ কম্পিউটারের ডিসপ্লেতে সম্পূর্ণভাবে দেখাতে যতটা সময় নিচ্ছে তাই হচ্ছে ওয়েবসাইট পেজ স্পিড।
ওয়েবসাইটে স্পিড অপটিমাইজেশন কী | what is website speed optimization
ওয়েবসাইট স্পিড অপ্টিমাইজেশন হলো যেকোনো ওয়েবসাইট লোডিং টাইম ইম্প্রুভ করার প্রেসেস। তাই বলা যায় ওয়েবসাইটের ডিজাইন বা অনান্য ফাংশনের বড় কোনো পরিবর্তন না করেই ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড বড়িয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় হলো ওয়েবসাইট স্পিড অপ্টিমাইজেশন।
ওয়েবসাইটে স্পিড অপ্টিমাইজেশন গুরুত । Importance of website speed optimization
একটি ওয়েবসাইটকে high-performance ক্যাটাগরিতে ফেলতে হলে সেই ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড কে অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে।
অর্থাৎ High Performance Website = High Speed Website.
গুগোল 2010 সাল থেকে ওয়েবসাইট স্পিড কে একটি র্যাংকিং ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচনা করছে। গুগোল সবসময় ওয়েবসাইটের পেজ স্পিড বৃদ্ধি করার জন্য উৎসাহ দেয় কারণ পেজ স্পিড শুধুমাত্র সার্চ র্যাংকিং পজিশনই নিশ্চিত করেনা এর সাথে বেস্ট ইউজার এক্সপেরিএন্সও ইনসিওর করে।
যেকোনো ওয়েবসাইটের রিটার্ন ভিজিটর ধরে রাখার ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের স্পিড অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে। স্লো লোডিং স্পিড ওয়েবসাইটের ট্রাফিক কমে যাওয়ার অন্যতম কারন হতে পারে।
যদি ওয়েবসাইটটি 3 সেকেন্ডের বেশী লোড নিতে সময় নেয় তাহলে ৫৩% মোবাইল ইউজার আপনার সাইট থেকে লিভ নিবে।
৭৯% ব্যবহারকারীর নেগেটিভ এক্সপেরিয়েন্স হবে যা তাদেরকে পুনরায় ওয়েবসাইটটিতে ভিজিট করতে অনুৎসাহিত করবে।
আধুনিক যুগে সকলেই ব্যস্ত নিজ নিজ কাজে, এই স্বল্প সময়ের মধ্যে তারা অনলাইনে সার্চ দিয়ে কাঙ্খিত তথ্যটি পেতে চায়, খেয়াল রাখবেন আপনার ওয়েবসাইটের লোডিং স্পীড যেন তাদের এই মূল্যবান সময় নষ্ট করার অন্যতম কারন না হয়।
সঠিক তথ্যের পাশাপাশি তথ্যটি যেন দ্রুত ভিজিটরের ব্রাউজারে দেখানো হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা সবাই জানি ওয়েবসাইট স্পিড কে ‘’গুগল’’ র্যাংকিং ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচনা করে, এই জন্য সার্চ ইঞ্জিন র্যাংকিং পজিশন ধরে রাখার জন্য ওয়েবসাইট স্পিড আপ করতে হবে।
যদি আপনার ওয়েবসাইটের স্পিড ৪ সেকেন্ডের বেশি হয় তাহলে বেশির ভাগ ভিজিটর ওয়েবসাইট থেকে সাথে সাথে লিভ নিবে। এইজন্য চেষ্টা করতে হবে যেকোনো ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড দুই থেকে তিন সেকেন্ডের মধ্যে রাখা।
এবার কয়েকটা পরিসংখ্যান দেখিঃ-
- যদি প্রতি 1 সেকেন্ড পেজ লোড নিতে দেরি করে তাহলে Amazon এর মত বড় ওয়েবসাইটগুলোতে প্রায় 1.6 বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- একটি কেইস স্টাডি থেকে জানা যায়, যেকোনো ওয়েবসাইটের পেজ লোড নিতে যদি ১ সেকেন্ড বেশি সময় নেয় তাহলে সেই ওয়েবসাইটে ৭% ভিজিটরস ড্রপ করতে পারে, আবার ১১% পেজ ভিউ, এবং ১৬% ভিজিটরদের ব্যাড এক্সপেরিয়েন্স হয়।
- প্রায় ৭০% কাস্টোমার মনে করে ওয়েবসাইটের পেজ স্পিড তাদের অনলাইন কেনাকাটা কে প্রভাবিত করছে।
- E-commerce বিজিনেসের জন্য লোডিং টাইম ২ সেকেন্ড হলে সেই পেজ গুলো সর্বোচ্চ Conversation Rate পেয়ে থাকে।
স্পিড অপ্টিমাইজেশন করার গুগল গাইডলাইন । website speed optimization Google guidelines
এই পর্যায়ে আমরা স্পিড অপ্টিমাইজেশন নিয়ে গুগলের কিছু গাইডলাইন জানবোঃ
গুগল 2010 সাল থেকে পেজ স্পিডকে র্যাংকিং ফ্যাক্টর হিসেবে ব্যবহার করছে।
গুগল 2018 সালে মোবাইল ডিভাইসের জন্য পেজ স্পীড কে র্যাংকিং ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচনা করার ঘোষনা দেয়।
গুগলের ভাষায়ঃ ‘’আমরা সব সময় ওয়েব ডেভলপারদের কে উৎসাহিত করি ওয়েবসাইট কে মোবাইল এবং ডেস্কটপ উভয় ডিভাইসের জন্যই সমানভাবে অপটিমাইজ করে তৈরি করার জন্য যাতে বিভিন্ন ডিভাইসে বিভিন্ন রকম র্যাংকিং রেজাল্ট না আসে’’
কি কি কারনে ওয়েবসাইট লোডিং স্পিড স্লো হয় । Factors of website slow loading speed
ভিজিটরা যেকোনো ইনফরমেশন খুজে পাওয়ার জন্য ওয়েবাসইটে ইন্সট্যান্ট এক্সেস পেতে চাই, এই জন্য একটি ওয়েবসাইটে যতই সুন্দর ডিজাইন থাকুক না কেন লোডিং স্পীড ফাস্ট না হলে ব্যবহারকারি সেই ওয়েবসাইট থেকে সরে যাবে।
এইজন্য সবসময় চেষ্টা করতে হবে ওয়েবসাইট স্পিড স্লো হওয়ার পিছনের কারন গুলো খুজে বের করার যাতে সঠিক সমাধান করতে পারেন।
আমরা এবার-ওয়েবসাইট লোডিং স্পিড স্লো হওয়ার বেসিক কিছু কারন তুলে ধরবো-
- আন-অপ্টিমাইজড ইমেজ
- আন অপ্টিমাইজড ওয়েবসাইট
- অতিরিক্ত প্লাগিন্স ব্যবহার করা
- অব্যাবহত JavaScripts or CSS
- সস্তা হোস্টিং সার্ভার ব্যবহার করা।
- অতিরিক্ত এ্যাড ব্যবহার করা।
ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড, সব সময় ওয়েবসাইটের সমস্যার কারনেই হবে এমন নাও হতে পারে, ভিজিটরের ব্যবহত কম্পিউটার স্লো অথবা নেট স্পিড স্লো, মাঝে মাঝে হোস্টিং সার্ভারে সমস্যা দেখা দেওয়ার কারনেও ওয়েবসাইট লোডিং স্পিড স্লো হতে পারে, আবার ওয়েবসাইটে অনেক ট্রাফিক থাকলেও কিছু কিছু সময় ব্রাউজিং স্পিড স্লো কাজ করতে পারে। আপনার ওয়েবসাইটে এই সমস্যা গুলো যদি থেকে থাকে তাহলে আমরা রিকমেন্ড করবো এইগুলো আগে সমাধান করার প্লান খুজে বের করতে তারপর অনান্য এডভান্স লেভেল স্ট্রাটেজি নিয়ে আমরা চিন্তা করবো।
ওয়েবসাইট স্পিড বাড়ানোর সহজ উপায় | Website Speed Optimization Bangla
ওয়েবসাইট স্পিড বৃদ্ধি করার জন্য সহজ কিছু উপায় রয়েছে যা আপনার ওয়েবসাইট কে অনেক ফাস্ট করে তুলবে।
তাহলে চলুন দেখে আসি সেই উপায় গুলো কি কিঃ
- ওয়েবসাইট অডিট করুন
- ওয়েবসাইটের সব গুলো পেজ ইন্ডেস্ক করুন
- অটো ইমেজ অপ্টিমাইজেশন প্লাগিন্স ইন্সটল করুন
- রেসপন্সিভ ওয়েবসাইট তৈরি করুন
- ভালো হোস্টিং প্যাকেজ কিনুন
- JavaScript এবং CSS এর ব্যবহার কমিয়ে দিন
- ওয়েবসাইট অডিট করুন
ওয়েবসাইটের ইন্টারনাল সমস্যা বের করার জন্য যেকোনো প্রিমিয়াম টুলস ব্যবহার করে ওয়েবসাইট টি অডিট করে নিতে হবে, এখানে ওয়েবসাইটের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখাতে পারে যেমনঃ 404 Error, 505 Error, Mobile Detecting Issues, Indexing Issues, Redirect links issues, Responsive issues, Unoptimised images Issues সেই সাথে ওয়েবসাইটের অভারঅল স্কোর দেখাবে যেটাতে আপনি আনুমানিক একটা ধারনা পাবেন যে ওয়েবসাইট টি কোন পজিশনে আছে।
ওয়েবসাইট অডিট করার পরে যে স্টেপ গুলো আপনি নিতে পারেনঃ-
- ওয়েবসাইটের সবগুলো Error ফিক্স করতে হবে
- আন-অপ্টিমাইজড ইমেজ গুলো ডিলেট করে দিতে হবে
- যে লিঙ্ক গুলোই ইন্ডেক্সিং ইসু, Error ইসু দেখাচ্ছে সেগুলো আবার অপ্টিমাইজ়ড করতে হবে
- ওয়েবসাইটের সব গুলো পেজ ইন্ডেস্ক করুন
ওয়েবসাইটে যদি অনেক বেশি Not Index পেজ থাকে তাহলে ওয়েবসাইট অনেক স্লো হয়ে যাবে এজন্যই আপনার প্রথম প্রায়োরিটি থাকবে ওয়েবসাইটের সবগুলো পেজে গুগল ইন্ডেস্ক করানো। যদি সবগুলো পেজ়ে গুগলে ভালোভাবে ইন্ডেক্স করে নিতে পারেন তাহলে দেখবেন ওয়েবসাইটের স্পিড ১ থেকে ১.৫ সেকেন্ড পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।
ওয়েব সাইটের পেজ গুলো ইন্ডেক্স করানোর জন্য যে স্টেপগুলো আপনি নিতে পারেনঃ
- প্রত্যেকটি লিংক আবার অপ্টিমাইজড করুন – যদি এটি ব্লগ ওয়েবসাইট হয় তাহলে প্রত্যেকটি আর্টিকেল আবার পুনরায় লিখুন।
- এরপরেও যদি কোন লিংক ইনডেস্ক না হয় তাহলে সেই লিংকগুলো ডিলিট করে Search Engine deindex set up করে দিন।
- Google Search Console Cloud – API সেটা আপ করুন যাতে সবগুলো পেজ অটো ইন্ডেক্স হয়।
- অটো ইমেজ অপ্টিমাইজেশন প্লাগিন্স ইন্সটল করুন
ওয়েবসাইট এর স্পীড বৃদ্ধি করার জন্য ইমেজ কম্প্রেস করা খুবই গুরুত্বপূর্ন। এইজন্য ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট হলে সেখানে অটো ইমেজ কম্প্রেশন প্লাগিনস ইন্সটল করে নিন, যাতে যখনই আপনি কোন ইমেজ আপলোড করেন তখন অটোমেটিক্যালি সেই ইমেজ রি-সাইজ হয়ে সবগুলো ডিভাইসের জন্য ফিট হয়।
- রেসপন্সিভ ওয়েবসাইট তৈরি করুন
ওয়েবসাইট যদি ডেস্কটপ অথবা মোবাইলের জন্য রেস্পন্সিভ না হয় তাহলে ওয়েবসাইটগুলোর লোডিং স্পিড অনেক বেশি স্লো হয়। যেকোনো ব্লগ ওয়েবসাইট অথবা বিজিনেস ওয়েবসাইটের জন্য মোবাইলে রেসপন্সিভ হওয়া খুবই জরুরী। এই জন্য ওয়েবসাইট কে যেকোনো ডিভাইসের জন্য রেসপন্সিভ করে নিন তারপরে দেখবেন ওয়েবসাইটের স্পিড অটোমেটিক্যালি বৃদ্ধি পেয়ে গেছে।
- ভালো হোস্টিং প্যাকেজ কিনুন
ভালো হোস্টিং প্যাকেজ ওয়েবসাইটের স্পিড বৃদ্ধি করার জন্য অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে থাকে এ জন্য মার্কেটপ্লেস থেকে বেস্ট হোস্টিং প্যাকেজ কিনে নিন যাতে ওয়েবসাইটের স্পিড আরো বেশি ফাস্ট করা যায়।
- JavaScript এবং CSS এর ব্যবহার কমিয়ে দিন
আপনার ওয়েবসাইটটিতে যদি আরো বেশি স্পিড বাড়াতে চান তাহলে ওয়েবসাইট থেকে অব্যাবহত জাভাস্ক্রিপ্ট এবং সিএসএস এর ব্যবহার কমিয়ে দিন সাধারণত এটি অ্যাডভান্স লেভেলের কাজ যদি আপনি অব্যবহত কোডিং কমিয়ে দিতে পারেন তাহলে ভালো আর যদি না পারেন তারপরও উপরের স্টেপ গুলো ফলো করলে অবশ্যই আপনার ওয়েবসাইটের স্পিড যথেষ্ট বৃদ্ধি পাবে।
শেষ কথাঃ উপরের প্রতিটি স্টেপ অনেক সহজ এবং সিম্পল- প্রথমত এই পদক্ষেপ গুলো আপনার ওয়েব সাইটের স্পিড বৃদ্ধি করার জন্য যথেস্ট কিন্তু আপনি যদি স্পিড অপ্টিমাইজেশন নিয়ে এডভান্স লেভের টেকনিক শিখতে চান তাহলে আমাদের এই আর্টিকেল টি পরুন এখানে আরো এডভান্স লেভের স্ট্রাটেজি নিয়ে ইন্সট্রাকশনাল গাইডলাইন দেওয়া আছে।